ইলিয়াস আলী গুম, বিএনপির চার নেতাকে সন্দেহ

নয় বছর পর ইলিয়াস আলী গুম হওয়া নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই বিতর্কের সূত্রপাত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। মির্জা আব্বাস দাবি করেছেন যে, ইলিয়াস আলীকে সরকার গুম করেনি। বিএনপির লোকেরা তাকে গুম করেছে বা মেরে ফেলেছে। ইলিয়াস আলীর স্মরণে এক আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে তিনি এই দাবি করেন। তার এই বক্তব্যের পর বিএনপির ভেতরে-বাইরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও নড়েচড়ে বসেছে।

যদিও মির্জা আব্বাস পরবর্তীতে তার বক্তব্যের অবস্থান থেকে সরে আসতে চেয়েছেন কিন্তু তাকে যখন শোকজ করা হয়েছে তার পরেই তার নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে তাঁকে যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে সেই নোটিশটি মেনে নিতে পারেনি মির্জা আব্বাস। এ কারণে তিনি পদত্যাগের কথাও ভাবছেন। একাধিক সূত্র বলছে, কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার পরপরই মির্জা আব্বাস বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনকে ইলিয়াস আলীর গুমের ব্যাপারে আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন এবং এই ঘটনার পেছনে বিএনপির অন্তত চারজন নেতা যুক্ত বলে মির্জা আব্বাস তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাছে বলেছেন। এদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য, সিলেট অঞ্চলের একজন প্রভাবশালী নেতা যিনি এখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা এবং বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা যিনি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, ইলিয়াস আলী যেদিন গুম হন তার আগের দিন বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে তার তীব্র বাদানুবাদ হয়েছিল। ইলিয়াস আলী ছিলেন স্পষ্টবাদী এবং স্বচ্ছ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তার সঙ্গে তারেক জিয়ার কিছু সমস্যা হচ্ছিল বলে বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে। বিশেষ অঞ্চলে তার যে রাজনৈতিক প্রভাব তা দ্রুত বাড়ছিল যা তারেকের এবং বিএনপির পলাতক এক নেতা নেতার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিদেশে পলাতক ওই নেতা যিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ব্যাপক ক্ষমতাবান ছিলেন। তিনি তার প্রভাব বলয় বিস্তার করে ইলিয়াস আলীকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছিলেন। এসব নিয়েই বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দুই নেতার মধ্যে কথাবার্তা হয়। এরপর ইলিয়াস আলী বেড়িয়ে যান। তারপর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মির্জা আব্বাস এবং বিভিন্ন বিএনপির নেতারা ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার পেছনে পলাতক বিএনপির ওই নেতার অবদান আছে, লন্ডনে থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বিষয়টি জানতেন বলে বিএনপির কোন কোন নেতা মনে করেন। এছাড়াও বিএনপির বর্তমানে সিলেটের নেতা, যিনি একজন জনপ্রতিনিধিও বটে তিনিও এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। তবে মির্জা আব্বাস কারো কাছেই এই ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেননি। তিনি কোন সূত্র থেকে ঘটনা জানেন সেটিও তিনি ব্যাখ্যা করেননি।

তবে একাধিক সূত্র বলছে যে, ইলিয়াস আলীর মৃত্যুর আগে মির্জা আব্বাসের সঙ্গে সিলেটের রাজনৈতিক বিরোধ নিয়ে কথা বলেছেন এবং এই বিরোধে তারেক জিয়া যে তাকে সমর্থন দিচ্ছেন না সে ব্যাপারেও হতাশা প্রকাশ করেছেন। আর এই বক্তব্যের সঙ্গে ইলিয়াস আলীর গুমের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে তিনি মনে করছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দেখতে চাচ্ছে যে, মির্জা আব্বাস বিএনপির যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে সেই নোটিশের জবাবে কি বলে। তিনি বলেন সেই জবাবের উপর নির্ভর করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তদন্ত।